রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন

উপ-সম্পাদক :: দিদার সরদার
প্রধান সম্পাদক :: সমীর কুমার চাকলাদার
প্রকাশক ও সম্পাদক :: কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর
যুগ্ম সম্পাদক :: মাসুদ রানা
সহ-সম্পাদক :: এস.এম জুলফিকার
প্রধান নির্বাহী সম্পাদক :: মামুন তালুকদার
নির্বাহী সম্পাদক :: সাইফুল ইসলাম
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :: আবুল কালাম আজাদ
সংবাদ শিরোনাম :
দুই দিনের সফরে আজ বরিশাল আসছেন অতিথি গ্রুপ অব কোম্পানির এমডি লায়ন সাইফুল ইসলাম সোহেল  পিরোজপুর ভান্ডারিয়ার যুব মহিলা লীগ নেত্রী জুথি গ্রেফতার গৌরনদীতে তিন দফা দাবি আদায়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা প্রশাসনকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতারা খালাস পাওয়ায় গৌরনদীতে আনন্দ মিছিল বরিশালের বাকেরগঞ্জসহ চারটি থানা এবং উপজেলায় নাগরিক কমিটি গঠন   আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা বিহীন বাংলাদেশ শান্তিতে থাকবে, এটা অনেকেরই ভালো লাগেনা-এম. জহির উদ্দিন স্বপন তারেক রহমানের বিজ্ঞ নেতৃত্বের কারণে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি-এম. জহির উদ্দিন স্বপন গৌরনদীতে দৈনিক যুগান্তরের বিরুদ্ধে বিড়ি শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল দুষ্টামিটাও ছিল যেমন স্পর্শকাতর, খেসারাতটাও দিতে হল তেমনি ভয়ঙ্কর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের ৫ সদস্যের বরিশাল মহানগরে আহ্বায়ক কমিটি গঠন
হাজি সেলিমের মামলার আপন গতি

হাজি সেলিমের মামলার আপন গতি

মিজানুর রহমান খান:

আইনের চিরচেনা ‘আপন গতি’ হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন পুরোনো মামলাটিকে নড়াচড়া করতে সাহায্য করেছে। এই আপন গতি নিয়ে আমাদের সংবাদ–সাহিত্য ইতিমধ্যে কম ঋদ্ধ হয়নি। যুগে যুগে এর রূপ পরিবর্তিত হয়েছে বুঝেশুনে। তবে যাঁরা ভাবছেন এবার এর শেষ পরিণতি দেখা যাবে, তাঁরা কি অভ্রান্ত? সত্যিই কি হাজি সেলিম দুর্নীতির দায়ে একটা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবেন?

ক্ষমতাসীন দল করলেই সাত খুন মাফ নয়, সেই রকম নজির বিরল নয়। তবে সমালোচকেরা যথার্থ বলবেন, আইনের এই আপন গতি বিরোধীদলীয় নেতারা তো বটেই, আশীর্বাদ হারানো সরকারি দলের নেতাদের ক্ষেত্রেও সব সময় সমানভাবে প্রয়োগ হয় না। আবার আপন গতির এমনই জাদু, এটা হঠাৎ চলতে শুরু করার মানে সব সময় এক নয়। কিছু দূর গিয়ে থেমে পড়তে পারে।

বিশেষ করে দুর্নীতির মামলা, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের মিল না থাকার মামলা। এই গোত্রের মামলা, যেখানে রাজনীতিকেরা জড়িত থাকেন, সেটা ঐতিহাসিকভাবে আচমকা পথ হারিয়ে ফেলে। ইদানীং সবার অলক্ষ্যে সম্ভবত একটি নতুন প্রবণতা শুরু হয়ে গেছে। সেটি হলো রাজনীতির সঙ্গে ওঠাবসা ও ঘনিষ্ঠতা আছে এমন কেউ হঠাৎ বিপদে পড়লেন। এর জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলেন না। যেমন রিজেন্টের সাহেদ। হঠাৎ মামলার বান ছুটল। দুর্নীতির মামলা তো হবেই। কিন্তু এ রকম একজনের জিম্মা থেকে একটি পিস্তল বা বন্দুক পাওয়া যাবে তা নিয়ে যাঁরা অপরাধবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেন, পড়েন এবং পড়ান, তাঁরা একটি সমীক্ষা চালাতে পারেন। সম্ভাব্য দৃশ্যকল্পটি এ রকম হতে পারে; হাজি সেলিমের মতোই কেউ, রাজনীতি যাঁকে গলি থেকে রাজপথে এনেছে, তাহলেই দেখবেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা হবে। এর সঙ্গে মাদক বা ঝকঝকে অথবা মরচে পড়া, একটা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হবে। এবং জনগণের সামনে যদি দেখাতে হয়, এ রকম লোককে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাহলে সেটা দুর্নীতির মামলার বিচার হবে না। দ্রুত বিচার হবে অস্ত্র মামলার।

অস্ত্র মামলার বিচারের আপন গতি আর দুর্নীতির মামলার বিচারের আপন গতির মধ্যে চোখে লাগা পার্থক্য সমাজে একটা নতুন ধাঁধা তৈরি করেছে। রিজেন্টের সাহেদের যে কীর্তি জনমানসকে আহত করেছে, সেটা তাঁর জালিয়াতির জন্য। হাতেনাতে ধরা পড়া দুর্নীতিই ছিল মূল কারণ। অথচ আমরা কী দেখলাম। সীমান্ত থেকে হেলিকপ্টারে উড়িয়ে আনা সাহেদকে নিয়ে যাওয়া হলো উত্তরায়। সেখান থেকে উদ্ধার হলো অবৈধ অস্ত্র। সেই অস্ত্র মামলায় সাহেদের ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’ চাইল রাষ্ট্রপক্ষ। তিনি পেলেন যাবজ্জীবন। আদালত তাঁর পর্যবেক্ষণে বললেন, সাহেদ ভদ্রবেশী প্রতারক। তাঁকে অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই। অবশ্যই খাঁটি কথা। কিন্তু কারও কি জানা আছে, তাঁর দুর্নীতি এবং প্রতারণার মামলার রায় কবে হবে। সেই বিচারের সূত্রে আমরা কবে জানব, সরকারি খাতের কারা তাঁকে জালিয়াতি করতে প্রাতিষ্ঠানিক যোগসাজশকারী ছিলেন। তদুপরি আমরা দেখলাম, মধ্য জুলাইয়ে আটক হওয়া একজন সাহেদ মধ্য সেপ্টেম্বরে এসেই দণ্ডিত হলেন। তিনি আর বিচারাধীন কয়েদি রইলেন না। এটাও অর্জন বটে।

ক্ষমতাসীন দল করলেই সাত খুন মাফ নয়, সেই রকম নজির বিরল নয়। তবে সমালোচকেরা যথার্থ বলবেন, আইনের এই ‘আপন গতি’ বিরোধীদলীয় নেতারা তো বটেই, আশীর্বাদ হারানো সরকারি দলের নেতাদের ক্ষেত্রেও সব সময় সমানভাবে প্রয়োগ হয় না। আবার ‘আপন গতি’র এমনই জাদু, এটা হঠাৎ চলতে শুরু করার মানে সব সময় এক নয়। কিছু দূর গিয়ে থেমে পড়তে পারে

সে কারণেই বলছি, একজন হাজি সেলিমের দুর্নীতির মামলার নথি তলবের ঘটনা একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। কোনো চাপাচাপি ছাড়াই ক্ষমতাসীন দলের একজন সাংসদ দুর্নীতির দায়ে দ্রুত বিচারের সম্মুখীন। নিম্ন আদালত রায় দিচ্ছেন। হাইকোর্টে আপিল হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তার শুনানি হচ্ছে। রায় হচ্ছে। দণ্ড বহাল থাকলে দণ্ডিত আপিল বিভাগে যাচ্ছেন। সেখানেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চূড়ান্ত রায় হচ্ছে। রিভিউ হলে তা আরও দ্রুততায় নিষ্পন্ন করা হচ্ছে। সেখানেও দণ্ড টিকে গেলে নির্বাচন কমিশন তৎপর হচ্ছে। নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দণ্ডিত জেল খাটছেন। সংসদে তাঁর আসন শূন্য হচ্ছে। উপনির্বাচন হচ্ছে। এই রকম একটি আপন গতি দেখতে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ। কিন্তু তাঁর কপালে লেপ্টে আছে বঞ্চনা। সংসদের ইতিহাসে দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতাসীন দলীয় সাংসদ চূড়ান্তভাবে দণ্ডিত হয়েছেন এবং সংসদে আসন হারিয়েছেন এবং সেখানে উপনির্বাচনে মানুষ নতুন বেছে নিতে পেরেছেন—এ রকম ঘটনা আদৌ ঘটেছে বলে মনে পড়ে না।

বরং মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী দণ্ডপ্রাপ্ত অবস্থায় মন্ত্রিত্বের মেয়াদ পূর্ণ করার যে নজির তৈরি করেছেন, তা ভালো নয়, বরং খুবই লজ্জা ও পরিতাপের। নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত হাজি সেলিমের ছেলের বড় পরিচয় তিনি একজন নির্বাচিত কাউন্সিলর। তিনি সংসদের স্টিকার লাগানো তাঁর পিতার গাড়িটি কেন ব্যবহার করেছিলেন এবং কত দিন ধরে তিনি তা ব্যবহার করেছেন, সিটি করপোরেশনে তাঁর দায়িত্ব পালনে তিনি দুর্নীতি করেছিলেন কি না, তাঁর জীবনযাপন জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা এবং প্রাপ্ত তথ্য জনগণকে অবহিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু প্রচার পেয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁর তাৎক্ষণিক দণ্ড এবং অবশ্যই সেটা দুর্নীতির দায়ে নয়। সেই চিরাচরিত ‘মদপান এবং বেআইনিভাবে ওয়াকিটকি’ ব্যবহারের দায়ে। এসব বিষয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আগে না জানার কোনো কারণ নেই। কিন্তু দেখার বিষয় হলো হাজি সেলিমের ছেলে কাউন্সিলর পদে কীভাবে মনোনয়ন পেলেন এবং পদে থেকে দুর্নীতিকে কতটা আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়েছেন, সেই তথ্য জানতে সব থেকে কম উৎসাহ লক্ষ করা। হাজি সেলিমের অবৈধ জমির ফিরিস্তি পত্রিকায় এসেছে। এটা অনুমান করা অযৌক্তিক হবে না যে সংসদের স্টিকার লাগানো গাড়িটি নিয়ে সেলিমপুত্র জমি জবরদখলে পেশিশক্তি প্রদর্শন করে থাকবেন। ঘটনাচক্রে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করা খারাপ। দরিদ্র মানুষকে নির্যাতন করে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে বা অনুরূপ হুমকি দেওয়া নিকৃষ্ট অপরাধ। এবং প্রশাসন অভয় দিলে কোনো গণশুনানিতে ইরফানের বিরুদ্ধে কথা বলার লোকের অভাব ঘটবে না। কিন্তু প্রশাসন কেন ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডদান নিয়ে গর্বিত? তার কারণ জনপ্রশাসন ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী নয়। তার দরকার ‘ন্যায়বিচারের’ মুখরোচক গল্প। একজন নাগরিককে ‘বিদেশি মদপান’ করার দায়ে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার মধ্যে দেশের বিশেষ উৎসাহী মহলের কাছে বার্তা প্রেরণ এবং সেখান থেকে জুতসই ‘বরকত’ আশা করার বিষয়ও আছে। রাষ্ট্র এ ধরনের সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে ভীষণ উৎসাহী।

হাজি সেলিমের ছেলে মাত্র এক বছর জেল এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার শাস্তি পেলেন এবং সেটাও দেশের কোনো স্বাধীন আদালতে নয়, ভ্রাম্যমাণ আদালতে। আর তাতেই তাঁকে সিটি পার্লামেন্ট থেকে তাঁর সদস্যপদ সাময়িকভাবে কেড়ে নেওয়া হলো, অথচ তাঁর পিতা হাজি সেলিম দুর্নীতির দায়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ আছেন।

দুই কারণে প্রশ্নবিদ্ধ। প্রথমত, সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, কেউ দণ্ডিত হওয়ামাত্র সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, তিনি সাংসদ হতেও পারবেন না এবং ওই পদে বহাল থাকারও অযোগ্য হবেন। আপিলে চূড়ান্তভাবে জয়ী না হওয়া পর্যন্ত তাঁর অযোগ্যতা যথারীতি চলমান থাকবে। বিচারপতি খায়রুল হকের দেওয়া রায়টি মানা হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, ছেলে ইরফান এক বছরের জেল পেয়ে বরখাস্ত হয়েছেন। তাঁর বাবা সেলিম ১৩ বছর জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার দণ্ড পান। ২০১১ সালে হাইকোর্ট তা বাতিল করলেও আপিল বিভাগ হাইকোর্টের বাতিল রায়টি চার বছর পরেই বাতিল করেন। পুনঃশুনানির নির্দেশ দেন। সেই শুনানি থমকে আছে পাঁচ বছর হলো। এখন পুত্রকাণ্ডের পর পিতার নথি তলব করা হয়েছে।

নতুন সংসদ নির্বাচনের তিন বছর বাকি। তার আগে কি দুর্নীতি মামলায় চূড়ান্তভাবে দণ্ডিত হাজি সেলিমের ঢাকার আসনটি শূন্য হবে?

‘প্রমাণিত অসদাচরণের’ (১৩ বছরের জেল) দায়ে সংসদীয় রীতিনীতি ও আইনি বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী হাজি সেলিমকে বরখাস্ত করা উচিত। সাংসদ সহিদ ইসলাম, টাঙ্গাইলের আমানুর রহমানকে আগলে রাখাও সংসদীয় রীতিনীতি সমর্থন করে না।

 মিজানুর রহমান খান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Dokhinerkhobor.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com